নিজস্ব প্রতিবেদক, নাইক্ষ্যংছড়ি

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিমারাপাড়া পাহাড় এলাকা থেকে আরাকান আর্মির মাদক পাচার কার্যক্রমে জড়িত এক মিয়ানমার নাগরিককে আটক করেছে সোনাইছড়ি পুলিশ ফাঁড়ি। আটক ব্যক্তির নাম সুমিঅং তঞ্চঙ্গ্যা (২৫)। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ভোরে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসরুরুল হকের নির্দেশনায় এ অভিযান পরিচালিত হয়।

আটক সুমিঅং তঞ্চঙ্গ্যা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আখিয়াব জেলার মংডু থানার কালারডেবা এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম অংছিপু তঞ্চঙ্গ্যা।

পুলিশ জানায়, তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুমিঅং স্বীকার করেন যে স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের কয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে আরাকান আর্মির মাদক পাচার কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্থানীয় দুই সহযোগীর নামও প্রকাশ করেন- মংগ্যা তঞ্চঙ্গ্যা (২৫), পিতা: পুনাউ তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম: মংজয়পাড়া, ঘুমধুম ইউনিয়ন, লাইক্য মং তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫), পিতা: লংটু অং তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম: হাতিমারাপাড়া, সোনাইছড়ি ইউনিয়ন

সুমিঅং আরও জানান, এই সহযোগীদের মাধ্যমে তিনি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আরাকান আর্মির মাদক প্রবেশ কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। প্রায় ২৫০–৩০০ কার্ট বার্মিজ ইয়াবা পাচারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথাও স্বীকার করেন।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সদস্যরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মাদক আনতে স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যা ও মার্মা সম্প্রদায়ের পাচারকারীদের সশস্ত্র পাহারা দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে। এমনকি স্থানীয় তরুণদেরও মাদক পাচারে যুক্ত হতে প্রলোভন দেখানো হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি দাবি করেন, তার কাছে ১০ কার্ট ইয়াবা এবং পাচারের নিরাপত্তায় ব্যবহারের জন্য আরাকান আর্মির সরবরাহকৃত একটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তার দেওয়া তথ্যে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হাতিমারাপাড়া এলাকায় তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে, তবে কোনো মাদক বা অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। সুমিঅং জানান, পুলিশের উপস্থিতির খবর পেয়ে তার সহযোগীরা ইয়াবা ও অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে ওসি মাসরুরুল হক বলেন, “আটক মিয়ানমার নাগরিকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তঃসীমান্ত মাদক চক্রের বিষয়ে তদন্ত আরও জোরদার করা হয়েছে।”

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “মিয়ানমারের কোনো নাগরিককে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির কঠোর নজরদারি চলছে।”

এলাকার কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দা জানান, সম্প্রতি কিছু ব্যক্তি স্থানীয় যুবকদের আরাকান আর্মি বা অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনে ভর্তির প্রলোভন দেখাচ্ছে, যা নিয়ে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।